অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার কী? | আপনার পিসি বা ল্যাপটপে অ্যান্টিভাইরাস কেন প্রয়োজন!

অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার

অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার কী? | আপনার পিসি বা ল্যাপটপে অ্যান্টিভাইরাস কেন প্রয়োজন!

কম্পিউটার হ্যাকাররা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ভাইরাস তৈরি করে চলছে। এসব নতুন ভাইরাসের আক্রমন থেকে কম্পিউটার বা পছন্দের ডিভাইসটিকে সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজন ভালোমানের একটি আপডেটেড ডাটাবেজ সম্বলিত অ্যান্টিভাইরাস। এসব অ্যান্টিভাইরাসের আপডেটেড ডাটাবেজে ‘ভাইরাস ডেফিনিসন লিস্ট’ থাকে আপটুডেট। যা কিনা নতুন নতুন সব ভাইরাস চিহ্নিত ও নির্মূল করতে কার্যকরি ভূমিকা পালন করে।

ভাইরাস কি?

কম্পিউটার ভাইরাস এমন একধরনের প্রোগ্রাম যা কম্পিউটার, ডিভাইস এবং সেখানে থাকা ফাইল এর ক্ষতি করে এবং সংক্রমিত ফাইলকে ব্যবহারের অযোগ্য করে তোলে। ভাইরাস প্রোগ্রাম কার্যকর হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজের প্রতিলিপি তৈরি করে। ভাইরাস তার নিজস্ব কোডিং এর মাধ্যমে কম্পিউটার বা ডিভাইসের অন্যান্য প্রোগ্রাম বা ফাইল সংশোধন করতে সক্ষম। ডিভাইসের কোনো ফাইল ভাইরাস আক্রান্ত হলে, এই সংক্রমন দ্রুত ডিভাইসের অন্যান্য ফাইলে ছড়িয়ে পরে। সংক্রমণ দ্রুত বন্ধ করা সম্ভব না হলে শেষপর্যন্ত ডিভাইসটি ক্র্যাশ করতে পারে। ডিভাইসকে এধরনের সমস্যা থেকে মুক্ত রাখতে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

যেহেতু কম্পিউটার ভাইরাস শুধুমাত্র ডিভাইসের প্রোগ্রামিং এ আক্রমন করে সেজন্য ভাইরাস দেখা যায় না। তবে কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ বিশ্লেষণের সাহায্যে কোনো ডিভাইস ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা বোঝা যায়। চলুন তবে একনজরে দেখে নেই লক্ষণ গুলো:

  • ডিভাইসের সিস্টেমের গতি কমে যায় এবং এপ্লিকেশন শুরু হতে তুলনামূলক বেশি সময় নেয়।
  • আক্রান্ত ডিভাইসে প্রোগ্রাম একাধিক পপ-আপ উইন্ডোস চালু হয়ে যায়।
  • ভাইরাসে আক্রান্ত প্রোগ্রাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করতে শুরু করে।
  • একাউন্ট হ্যাক হওয়া এবং একাউন্ট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লগ আউট হয়ে যাওয়া।
  • ডিভাইস ক্র্যাশ করে, অনেক ক্ষেত্রে ডিভাইস কাজ করা বন্ধ করে দেয়।

কোনো ডিভাইস ভাইরাস আক্রান্ত হলে প্রথমত ডিভাইসটির প্রসেসিং স্পিড কমে যেতে শুরু করে, পরবর্তীতে অন্যান্য লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে।

ভাইরাস কিভাবে কাজ করে?

কিছু ভাইরাস কম্পিউটারের বুট সেক্টরকে অর্থাৎ কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভের যে অংশ স্টার্ট-আপ রুটিনের কোড সংরক্ষণ করে সেখানে আক্রমন করে। এধরনের ভাইরাস কম্পিউটার চালু করার সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে ডিভাইসের ক্ষতি করে।

আবার কিছু ভাইরাস ইমেইল, গেমস বা সংযুক্ত ডকুমেন্ট এর মাঝে লুকিয়ে থাকে। এধরনের ভাইরাসে ডিভাইস আক্রান্ত হবার পরও সেসব এপ্লিকেশন  স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে থাকে। এরকম ভাইরাসের কোড আক্রান্ত ডিভাইসের কন্টাক্ট লিস্টের সকলকে ভাইরাস সম্বলিত মেইল স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাঠাতে সক্ষম।

কম্পিউটার বা ডিভাইসের জন্য আরেকটি ক্ষতিকর এজেন্ট হল ওয়ার্ম। এরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেদের প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে। অধিকাংশক্ষেত্রে এধরনের ভাইরাস ডিভাইসের প্রোগ্রামিংকে সংক্রমিত করে অন্যান্য অগণিত কম্পিউটারে নিজেদের প্রতিলিপি প্রেরণ করে। এধরণের ভাইরাস নেটয়ার্কের মাধ্যমে অন্যান্য ডিভাইসকে সংক্রমিত করে। আক্রান্ত ডিভাইসের প্রসেসিং পাওয়ার এবং ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে এধরনের ভাইরাস এই কাজটি করে থাকে।

তবে সবচেয়ে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে বটনেট। প্রায়শই ইমেইল এটাচমেন্ট এর সাহায্যে ক্ষতিকর কোড হাজার হাজার কম্পিউটারে ছড়িয়ে দেয় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেসব কম্পিউটারে নিজেদের ইন্সটল করে ফেলে।

অ্যান্টিভাইরাস কি?

অ্যান্টিভাইরাস বিশেষভাবে ডিজাইনকৃত একধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা কিনা কম্পিউটারের বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়ার, ভাইরাস; ওয়ার্মস, ট্রোজানস, এডওয়্যার এর মতো বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর সফটওয়্যার খুঁজে বের করা, শনাক্ত করা, ভাইরাসের প্রবেশ ঠেকানো এবং তা অপসারণ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। কম্পিউটারে পরবর্তীতে কোনো নতুন ভাইরাস এর আক্রমন ঠেকাতেও অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহৃত হয়।

উইন্ডোজ, ম্যাক-ওএস, অ্যান্ড্রয়েড, আইফোন এবং লিনাক্সসহ বিভিন্ন ধরনের অপারেটিং সিস্টেমের জন্য আলাদা আলাদা ধরনের অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম রয়েছে।

যেমনঃ Kaspersky, Malwarebytes, mcAfee, Emsisoft, Bitdefender, ESET ইত্যাদি।

অ্যান্টিভাইরাস কিভাবে কাজ করে?

অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার নেটওয়ার্ক ট্রাফিকের মাধ্যমে আসা কম্পিউটার বা ডিভাইসের প্রতিটি ফাইল এবং কোড স্ক্যান করে। যেসব কোম্পানি অ্যান্টিভাইরাস প্রস্তুত করে থাকে; তারা এখন পর্যন্ত শনাক্তকৃত সকল ভাইরাস এবং ম্যালওয়্যার এর একটি বিস্তৃত ডাটাবেজ অনুসরণ করে এবং অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারকে সেসব ভাইরাস, ম্যালওয়্যার শনাক্ত করতে এবং তা নির্মূলে সক্ষম করে প্রোগ্রামিং করে থাকে।

অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার কম্পিউটারের সকল ফাইল, এপ্লিকেশন, প্রোগ্রামকে সেই ডাটাবেজের সাথে মিলিয়ে স্ক্যান করে। কোনো ফাইল, প্রোগ্রাম বা এপ্লিকেশনে যদি সেই ডাটাবেজের সাথে কোনো কিছু পুরোপুরি মিলে যায় তবে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার সেই ফাইল, প্রোগ্রাম, এপ্লিকেশনকে ভাইরাস হিসেবে চিহ্নিত করে, পৃথক করে এবং নির্মূল করে।

অধিকাংশ অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারে স্বয়ংক্রিয় এবং ম্যানুয়ালি উভয় পদ্ধতিতে ভাইরাস, ম্যালওয়্যার স্ক্যান করা এবং তা ডিভাইস থেকে অপসারণ করার অপশন থাকে। অ্যান্টিভাইরাস স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ক্যানিং সম্পন্ন করার পর খুঁজে পাওয়া ভাইরাস অপসারণের জন্য অনুমতি চেয়ে থাকে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবেও তা অপসারণ করতে সক্ষম।

ম্যালওয়্যারঃ

ডাটা চুরি, কম্পিউটার ডিভাইসের ক্ষতি থেকে শুরু করে কারো ডিজিটাল নিরাপত্তায় আক্রমন সহ যেকোনো ধরনের ক্ষতিসাধনের উদ্দ্যেশ্যে তৈরি করা সফটওয়্যার হচ্ছে ম্যালওয়্যার। সাধারণত সন্দেহজনক কোনো লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করা কোনো প্রোগ্রাম রান করার ফলে ম্যালওয়্যার কম্পিউটার বা ডিভাইসকে আক্রান্ত করে।

অ্যান্টিভাইরাস ও অ্যান্টিমেলওয়্যার এর মধ্যে পার্থক্যঃ

অ্যান্টিভাইরাস ও অ্যান্টিম্যালওয়্যার উভয়ই কম্পিউটার বা ডিভাইসকে ক্ষতিকর সফটওয়্যার থেকে নিরাপদ রাখার জন্য তৈরি করা হলেও, যেখানে অ্যান্টিভাইরাস সাধারণত পূর্বপরিচিত অসংখ্য ভাইরাস থেকে কম্পিউটারকে নিরাপদ রাখতে ব্যবহার করা হয়।

অন্যদিকে অ্যান্টিম্যালওয়্যার বিশেষত র‍্যানসমওয়্যার এবং ট্রোজানের মতো নির্দিষ্ট কিছু শক্তিশালী ভাইরাস থেকে নিরাপত্তা দিতে ব্যবহার করা হয়।

অ্যান্টিভাইরাস মূলত কম্পিউটারে যাতে ক্ষতিকর কোনো ফাইল ডাউনলোড না হয় বা প্রবেশ করে কম্পিউটারের ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য প্রতিরোধমূলক নিরাপত্তার দিকে কাজ করে।

অন্যদিকে অ্যান্টিম্যালওয়্যার ইতোমধ্যে কম্পিউটারে বিদ্যমান ক্ষতিকর ফাইলগুলোকে খুঁজে বের করে এবং নিষ্ক্রিয় করতে প্রতিক্রিয়ামূলক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

অ্যান্টিভাইরাস এর সুবিধা ও অসুবিধাসমূহঃ

সুবিধাঃ

  • ভাইরাস থেকে ডিভাইসকে নিরাপদ রাখা যায়
  • স্পাইওয়্যার থেকে ডিভাইসকে নিরাপদ রাখা যায়
  • নিরাপদভাবে ওয়েব ব্রাউজিং করা যায়
  • স্প্যাম থেকে নিরাপদ থাকা যায়
  • ফায়ারওয়াল
  • সাশ্রয়ী

অসুবিধাঃ

  • সিস্টেম স্লোডাউন
  • পরিপূর্ণ নিরাপত্তার সুযোগ নেই
  • নিরাপত্তার গহ্বর
  • সীমিত শনাক্তকরণ কৌশল
  • ঘন ঘন বিজ্ঞাপন
  • সীমিত গ্রাহক পরিসেবা

কিভাবে কম্পিউটার ভাইরাস ডিফেন্ড করবেন ?

প্রথমত, ট্র্যাডিশনাল ভাইরাসের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে উইন্ডোজ এর পরিবর্তে লিনাক্স বা ম্যাক ওএস এর মতো অধিকতর নিরাপদ এবং তুলনামূলক কম প্রচলিত অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা উত্তম।

দ্বিতীয়ত, কম্পিউটার বা ডিভাইসকে অনিরাপদ রাখার চেয়ে ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস বা অ্যান্টিম্যালওয়্যার ব্যবহার করা অধিকতর নিরাপদ। অনেক অ্যান্টিভাইরাস ও অ্যান্টিম্যালওয়্যার এর ফ্রি ভার্সন অনলাইনে পাওয়া যায়।

অপরিচিত সোর্স থেকে ডাউনলোড করা প্রোগ্রাম রান না করাই উত্তম। প্রয়োজনে অ্যান্টিভাইরাস এর অরিজিনাল সিডি কেনা যেতে পারে, যা কিনা প্রায় সকল ধরনের ট্র্যাডিশনাল ভাইরাসের হাত থেকে ডিভাইসকে নিরাপদ রাখতে পারবে।

অপরিচিত বা কোনো সন্দেহজনক ইমেইল এর সাথে সংযুক্ত কোনো .jpg গ্রাফিক ফাইল, .exe , vbs এর মতো ফাইল রান না করাই শ্রেয়।

ভাইরাসের হাত থেকে ডিভাইসের সুরক্ষার পাশাপাশি ‘ইন্টারনেট সিকিউরিটি’ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কেনোনা বর্তমানে অনলাইন সার্ফিং বা অনলাইন ব্যবহার পূর্বের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেড়েছে। একারনেই ইন্টারনেট থেকে ডিভাইসে ভাইরাস এর আক্রমন ঠেকাতে সিস্টেম সিকিউরিটি এক্সপার্টরা ভালো মানের একটি অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন । কম্পিউটারকে ভাইরাস, ম্যালওয়্যার সহ সবধরনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিরাপদ রাখতে সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারেন Emsisoft, ESET, Malwarebytes এর মতো ভরসাযোগ্য কিছু সফটওয়্যার।

Share this post

Comments (2)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *